মালদা জেলা ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের জেলা গুলির মধ্যে একটি অন্যতম উল্লেখযােগ্য জেলা, যা মালদা বা মালদহ নামেও পরিচিত। একসময় এই মালদা জেলা বাংলার রাজধানী ছিল। এটি বাংলাদেশের সাথে ১৫.৫ কিমি আন্তর্জাতিক সীমানা ভাগ করে নিয়েছে। এই অঞ্চলে উৎপাদিত বিশেষ জাতের আম হল ফজলি, যা বিশ্বজুড়ে রপ্তানি হয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে প্রশংসিত।
এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমরা জানব পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি বিশিষ্ট জেলা কালিম্পং জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
Introduction of Malda District |
✪ মালদা জেলা (Malda District) :
![Map of Malda District Map of Malda District](https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEgh_Nh89sJhuQjUTP39tjbPfeJf1hyDqaCoWVYrWdxclSTdOLsXYCMsbyb5OOzTmHP_NDeruOVws2lKMn0BgM2BmXbx_8NtglHgg5h1oVnUgL-PK7neXTE0kvIU1677nMnPPUWX0Hjac-5QpvXfDPWQO46ecJy_x-uYOJrNdHiklm7-KLf4ij7to3lazQ=w226-h320)
Map of Malda District
❂ প্রতিষ্ঠিত :
মালদা জেলাটি স্থাপিত হয় ১৭ই আগস্ট ১৯৪৭ সালে।
❂ আয়তন :
মালদা জেলার মােট আয়তন ৩,৭৩৩ বর্গ কিলােমিটার।
❂ জনসংখ্যা :
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে মালদা জেলার মোট জনসংখ্যা ৩৯ লক্ষ ৯৭ হাজার ৯৭০ জন।
❂ সীমানা :
মালদা জেলার ভৌগলিক সীমানা হল - উত্তরে বিহার ও উত্তর-দক্ষিণ দিনাজপুর, দক্ষিণে মুর্শিদাবাদ ও বাংলাদেশ, পূর্বে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমে ঝাড়খন্ড ও বিহার।
❂ ইতিহাস :
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার মালদা একসময় গৌড়-বঙ্গের রাজধানী ছিল। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ১৮১৩ সালে পূর্ণিয়া দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলার কিছু অংশের সমন্বয়ে মালদা জেলাটি গঠিত হয়। তবে ১৮৭৬ সাল পর্যন্ত এই জেলা রাজশাহী বিভাগের অংশ ছিল এবং পরে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত ভাগলপুর বিভাগের অন্তর্ভূক্ত হয়, পরে আবারও ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই জেলা রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত হয়।
![]() |
History of Malda District |
এরপর ১৯৪৭ সালে দেশভাগের কারণে এই জেলা পাকিস্তানে বা ভারতে কোন দিকে যাওয়া উচিত তা ঠিক না থাকায় কয়েকদিনের জন্য জেলাটি পূর্ব পাকিস্তানের ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে থাকে, কারণ স্যার র্যাডক্লিফ সেই সময় দেশভাগ ঘােষণার বিষয়টি এই জেলার জন্য পরিষ্কার করে দেয়নি। তবে কয়েকদিন পর স্যার র্যাডক্লিফ দেশভাগের বিবরণ পুকাশিত করলে ১লা আগস্ট ১৯৪৭ সালে জেলাটি পশ্চিমবঙ্গে চলে আসে, এরপর ১৯৪৭ সালের ১৭ই আগস্ট নতুন করে মালদা জেলার আত্মপ্রকাশ ঘটে।
❂ প্রশাসনিক বিভাগ :
✪ জেলা সদর : এই মালদা জেলার জেলা সদর -
- ইংলিশবাজার।
✪ বর্তমান জেলাশাসক : শ্রী রাজর্ষি মিত্র, আইএএস (জেলা শাসক ও জেলা সমাহর্তা, মালদা)।
✪ মহকুমা : এই জেলার মহাকুমা ২টি -
- মালদা সদর ও
- চাঁচল।
✪ পৌরসভা : পৌরসভা ২টি -
- ইংলিশবাজার ও
- পুরাতন মালদা।
✪ ব্লক : এই জেলার ব্লক সংখ্যা হল ১৫টি (মালদা সদর মহাকুমার ৯টি ব্লক ও চাঁচল মহাকুমার ৬টি ব্লক), এগুলি হল -
- ইংলিশবাজার,
- গাজোল,
- হাবিবপুর,
- কালিয়াচক-১,
- কালিয়াচক-২,
- কালিয়াচক-৩,
- মানিকচক,
- পুরাতন মালদা,
- বামনগােলা,
- চাঁচল-১,
- চাঁচল-২,
- রতুয়া-১,
- রতুয়া-২,
- হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ও
- হরিশ্চন্দ্রপুর-২।
✪ পঞ্চায়েত সমিতি : মালদা জেলায় ১৫টি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে।
✪ গ্রাম পঞ্চায়েত : মালদা জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে ১৪৬টি।
✪ গ্রাম : মালদা জেলায় গ্রাম রয়েছে ৩৭০১টি।
✪ থানা : মালদা জেলায় মােট থানা রয়েছে ১১টি।
✪ জেলা পরিষদ : মালদা জেলার জেলাপরিষদের সংখ্যা ১টি।
✪ লােকসভা কেন্দ্র : মালদা জেলায় লােকসভা কেন্দ্র রয়েছে ২টি -
- মালদা উত্তর ও
- মালদা দক্ষিণ।
✪ বিধানসভা কেন্দ্র : মালদা জেলায় বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে ১২টি, এগুলি হল -
- হাবিবপুর,
- গাজোল,
- চাঁচল,
- হরিশ্চন্দ্রপুর,
- মালতীপুর,
- রতুয়া,
- মানিকচক,
- মালদহ,
- ইংরেজ বাজার,
- মােথাবাড়ি,
- সুজাপুর ও
- বৈষ্ণবনার।
❂ ভূ-প্রকৃতি :
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা এই মালদা জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দৰ্য্যও অপরূপ। মালদা জেলার মৃত্তিকা সমতল প্রকৃতির যা জেলাটির উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত মহানন্দা নদীর উভয় তীরে পরিলক্ষিত হয়। অপরপক্ষে জেলাটির দক্ষিণভাগ গঙ্গার পললমৃত্তিকা সমৃদ্ধ ফলে অঞ্চলটি উর্বর ও কৃষিসমৃদ্ধ৷ মালদা জেলার ভূ-প্রকৃতি মূলত সমতল হলেও কিছু কিছু স্থানে উঁচু-নিচু ভূমি দেখতে পাওয়া যায়।
❂ নদ-নদী :
মালদা জেলার উল্লেখযােগ্য নদীগুলি হল গঙ্গা, মহানন্দা, কালিন্দী, টাঙ্গন, নগর, পূনর্ভবা ইত্যাদি।
❂ বনভূমি :
মালদা জেলার মাত্র ১৭ বর্গ কিলােমিটার এলাকা বনভূমি আচ্ছাদিত। জেলার দক্ষিণ ও মধ্যভাগে বিস্তৃত এই বনভূমিগুলির অধিকাংশই মহানন্দা ও কালিন্দী নদীর তট বরাবর অবস্থিত।
❂ কৃষিকাজ :
মালদা একটি কৃষি নির্ভর জেলা। মালদা জেলায় ধান, গম, পাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের শাকসবজি, ফলমূল ও তৈলবীজ উৎপাদিত হয়। মালদা জেলা পশ্চিমবঙ্গে ধান উৎপাদনে দশম এবং গম উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আম, পাট এবং রেশম এ জেলার সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য পণ্য। মালদা ভারতে সেরা মানের পাট উৎপাদনকারী একটি জেলা এবং ফজলি আমের জন্য মালদা জেলার সুপরিচিতি রয়েছে।
❂ অর্থনীতি ও শিল্প:
কৃষি হল মালদা জেলার অর্থনীতির প্রধান উৎস৷ বৃহৎ শিল্পে এই জেলা বিশেষ উন্নত না হলেও এখানকার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। কৃৃষি ছাড়াও মালদহ, গৌড়-পান্ডুয়া বহু পুরানো ঐতিহ্য ও পর্যটনস্থল যা জেলাটির অর্থনীতির অন্যতম উৎস৷
❂ সাক্ষরতা :
মালদা জেলার সাক্ষরতার হার - ৬২.৭১ শতাংশ।
❂ ভাষা :
মালদা জেলায় বসবাসকারী বেশীরভাগ মানুষদের প্রধান ভাষা হল বাংলা। তবে এই জেলায় সাঁওতালি, হিন্দি, খোরঠা প্রভৃতি ভাষাও প্রচলিত।
❂ ধর্ম :
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে মালদা জেলায় বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে ৪৭.৯৯% হিন্দু ধর্মালম্বী, ৫১.২৭% ইসলাম ধর্মালম্বী, ০.৩৩% খ্রিস্ট ধর্মালম্বী এবং ০.৪১% অন্যান্য ধর্মালম্বী।
❂ সংস্কৃতি :
মালদা জেলার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল গম্ভীরা লোকজ সংস্কৃতি, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের আনন্দ ও দুঃখের প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় উপস্থাপনের এক অনন্য মাধ্যম।
![]() |
Culture of Malda District (Gambhira) |
এছাড়াও আলকাপ ও কবিগান উল্লেখযোগ্য৷ গম্ভীরা মালদহ জেলার একটি ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যপুর্ণ অনুষ্ঠান৷ বিশেষত চৈত্রের শেষ সপ্তাহে তিনদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান উৎযাপিত হয়৷ বঙ্গদেশের প্রাচীন ও অধুনালুপ্ত শাস্ত্রীয় নৃৃত্য তথা গৌড়ীয় নৃত্যের উৎপত্তি মালদহ জেলাতেই৷
❂ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান :
মালদা জেলার কয়েকটি উল্লেখযােগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল -
- গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়,
- মালদা কলেজ,
- মালদা ওমেনস্ কলেজ,
- গৌড় মহাবিদ্যালয়,
- চাঁচল কলেজ,
- হরিশ্চন্দ্রপুর কলেজ,
- কালিয়াচক কলেজ,
- মালদা মেডিক্যাল কলেজ,
- মালদা পলিটেকনিক কলেজ ইত্যাদি।
![]() |
Gour Banga University, Malda District |
❂ পরিবহন ব্যবস্থা :
মালদা জেলায় পরিবহন ব্যবস্থা হিসাবে উন্নত সড়কপথ তাে রয়েছেই, সঙ্গে রেলপথ ও আকাশপথেরও ব্যবস্থা রয়েছে। এই জেলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন হল মালদা টাউন রেলওয়ে স্টেশন, ওল্ড মালদা জংশন, সিঙ্গাবাদ প্রান্তিক স্টেশন, একলাখি জংশন, কুমেদপুর জংশন ইত্যাদি এবং এই জেলার একমাত্র বিমানবন্দরটি হল মালদা বিমানবন্দর।
❂ দর্শনীয় স্থান :
মালদা জেলার উল্লেখযােগ্য দর্শনীয় স্থানগুলি হল -
১। রামকেলি : মালদা শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলােমিটার দূরে অবস্থিত গৌড়ের পথে একটি ছােট্ট গ্রাম রামকেলি বাংলার মহান ধর্ম সংস্কারক শ্রী চৈতন্যের অস্থায়ী বাড়ি হিসাবে বিখ্যাত, যেখানে তিনি বৃন্দাবনে যাওয়ার পথে কিছু দিন অবস্থান করেছিলেন। দুটি তমাল এবং দুটি কদম্ব গাছের সমষ্টি এখনও দেখা যায়, যার অধীনে তিনি ধ্যান করেছিলেন বলে জানা যায়। এই গাছের নীচে নির্মিত একটি ছােট মন্দিরে পাথরের ওপর শ্রীচৈতন্যের পায়ের চিহ্ন রয়েছে।
২। বারােদুয়ারী/বােরাে সােনা মসজিদ : রামকেলির দক্ষিণে আধা কিলােমিটার দূরে বারােদুয়ারী মসজিদটি অবস্থিত। ইট ও পাথরের বিশাল আয়তাকার কাঠামােযুক্ত এই মসজিদটি গৌড়ের বৃহত্তম স্মৃতিসৌধ, যা পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ করে।
৩৷ দাখিল দরজা : ১৪২৫ সালে নির্মিত দাখিল দরজা একটি চিত্তাকর্ষক প্রবেশদ্বার। এটি একটি মুসলিম স্মৃতিস্তম্ভ, যা ছোট লাল ইট এবং পােড়ামাটি দিয়ে তৈরি।
৪। ফিরােজ মিনার : দাখিল দরজা থেকে ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফিরােজ মিনার। কুতুব মিনারের মতাে দেখতে এই পাঁচতলা টাওয়ারটি ২৬ মিটার উঁচু এবং ১৯ মিটার পরিধি।
৫৷ আদিনা হরিণ উদ্যান : জেলা শহর মালদা থেকে ২১ কিলােমিটার দুরে আদিনা হরিণ উদ্যান অবস্থিত। উদ্যানটি রাজ্যে চিতল বা দাগযুক্ত হরিণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বংশনকেন্দ্র এবং কখনাে কখনাে তারা সংখ্যায় উপচে পড়ে।
৬। আদিনা মসজিদ : সুলতান সিকান্দার শাহ কর্তৃক ১৩৬৯ সালে নির্মিত এই আদিনা মসজিদ ভারতের বৃহত্তম মসজিদগুলির মধ্যে একটি।
এরপর - মা জহুরা মন্দির, মালদহ জেলা সংগ্রহশালা, চিকা মসজিদ, একলাখী সমাধীসৌধ, চাঁচল রাজবাড়ি ইত্যাদি।
এই হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি বিশিষ্ট জেলা মালদা জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
0 মন্তব্যসমূহ