জলপাইগুড়ি জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয় / About Jalpaiguri District in Bengali

আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু বিষয় সম্পর্কে জেনেই চলেছি, এই সবকিছুর পাশাপাশি চলুন জেনে নেওয়া যাক নিজ নিজ জেলা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সেই হিসাবে এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমরা জানব পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি বিশিষ্ট জেলা জলপাইগুড়ি জেলা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

জলপাইগুড়ি জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
জলপাইগুড়ি জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

জলপাইগুড়ি জেলা (Jalpaiguri District) :

পশ্চিমবঙ্গের জেলা গুলির মধ্যে একটি অন্যতম উল্লেখযােগ্য জেলা হল জলপাইগুড়ি জেলা। এটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর অংশে অবস্থিত। জেলাটি প্রাথমিকভাবে গ্রামীণ জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত, যেখানে উচ্চ সংখ্যক SC/ ST উপস্থিত। জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা চা বাগানেও একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।


জলপাইগুড়ি জেলার ম্যাপ
জলপাইগুড়ি জেলার ম্যাপ


 প্রতিষ্ঠিত :

১৮৬৯ সালে ব্রিটিশ রাজের সময় জলপাইগুড়ি জেলাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

❂ আয়তন :

জলপাইগুড়ি জেলার মােট আয়তন ৩৩৮৬.১৮ বর্গ কিলােমিটার।

❂ জনসংখ্যা :

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী জলপাইগুড়ি জেলার মােট জনসংখ্যা ২৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৫৯৬ জন।

  • পুরুষ - ১২১৭৫৩২ জন।
  • মহিলা - ১১৬৪০৬৪ জন।
  • জনসংখ্যার ঘনত্ব - ৭০১ জন প্রতি বর্গ কিলােমিটার।
  • লিঙ্গ অনুপাত - ৯৫৬.০৮৫ জন।

❂ সীমানা :

জলপাইগুড়ি জেলার ভৌগলিক সীমানা হল - উত্তরে কালিম্পং জেলা ও ভুটান রাষ্ট, দক্ষিণে কোচবিহার জেলা, পূর্বে নবগঠিত আলিপুরদুয়ার জেলা এবং পশ্চিমে দার্জিলিং জেলা।

❂ নামকরণ :

ইতিহাস অনুযায়ী এই জেলার নাম জল্পেশ্বর থেকে এসেছে, যা শিব ঠাকুরের আরেক নাম। কিন্তু কেউ কেউ বলেন এই স্থানে আগে নাকি প্রচুর মাত্রায় জলপাই-এর গাছ ছিল, যার জন্য এই জায়গার নাম জলপাইগুড়ি। জলপাইগুড়ি নামটি এসেছে "জলপাই" শব্দ থেকে, যার অর্থ "জলপাই" এবং এই জলপাই হল একটি ফল, যার গাছ এই শহর এবং সংলগ্ন অঞ্চলে প্রচুর মাত্রায় দেখা গিয়েছিলো। "গুড়ি" প্রত্যয়টির অর্থ একটি স্থান।

❂ ইতিহাস :

পূর্বে এই স্থানটি কোচ রাজবংশীদের এক ভাগ ছিল, যার নাম ছিল কামতাপুর। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে এই স্থানটি নতুন রূপে জলপাইগুড়ি জেলা হিসাবে স্থাপিত হয়।

❂ প্রশাসনিক বিভাগ :

জেলা সদর - জলপাইগুড়ি জেলার জেলা সদর হল - 

  • জলপাইগুড়ি।

বর্তমান জেলাশাসক - Smt. Moumita Godara Basu, IAS

মহকুমা - এই জেলার মহাকুমা হল ২টি -

  • জলপাইগুড়ি সদর ও
  • মাল।

পৌরসংস্থা - এই জেলার পৌরসংস্থা ১টি, এটি হল -

  • শিলিগুড়ি পৌরসংস্থা।

পৌরসভা - জলপাইগুড়ি জেলার পৌরসভা ৩টি, এগুলি হল -

  • জলপাইগুড়ি,
  • মালবাজার ও
  • ধুপগুড়ি।

ব্লক - এই জেলার ব্লক সংখ্যা হল ৭টি, এগুলি হল -

  • জলপাইগুড়ি সদর,
  • ধূপগুড়ি,
  • ময়নাগুড়ি,
  • রাজগঞ্জ,
  • মাল,
  • মাটিয়ালি ও
  • নাগরাকাটা।

পঞ্চায়েত সমিতি - এই জেলায় ৭টি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে।

গ্রাম পঞ্চায়েত - জলপাইগুড়ি জেলায় ৮০টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে।

জেলা পরিষদ - এই জেলার জেলাপরিষদের সংখ্যা ১টি।

* বিধানসভার আসন - বিধানসভার আসন ৬টি, এগুলি হল -

  • ধুপগুড়ি,
  • ময়নাগুড়ি,
  • জলপাইগুড়ি,
  • রাজগঞ্জ,
  • ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি,
  • মাল ও
  • নাগরাকাটা।

লােকসভার আসন - লােকসভার আসন ১টি, এটি হল -

  • জলপাইগুড়ি।

থানা জলপাইগুড়ি জেলায় মােট ৯টি থানা রয়েছে।

মৌজা এই জেলার মৌজার সংখ্যা ৪১৮টি।

গ্রাম সংসদ এই জেলার গ্রাম সংসদ ১১৭৭টি।

জনবহুল গ্রাম এই জেলার জনবহুল গ্রাম ৪০৪টি।

বন গ্রাম এই জেলার বন গ্রাম ২৯টি।


 ভূ-প্রকৃতি :

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরে অবস্থিত এই জলপাইগুড়ি জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দৰ্য্যও অপরপ। হিমালয় পাদদেশীয় তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চলে জলপাইগুড়ি জেলাটি অবস্থিত। হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলের নুড়ি, পলি, বালি সঞ্চিত হয়ে ঈষৎ তরঙ্গায়িত ভূমিরূপ সৃষ্টি করেছে। এই জেলার ভূ-সংস্থান বৈচিত্র্যময় এবং নদী-নালা দিয়ে আবদ্ধ, সমতল এবং পাহাড় অঞ্চল বিশিষ্ট।

❂ নদ-নদী :

জলপাইগুড়ি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলির মধ্যে প্রধান নদীগুলি হল তিস্তা, তাের্সা, জলঢাকা, রায়ডাক, মুজনাই, করলা, ধরলা ইত্যাদি। এই জেলার দুটি নদী বাঁধ প্রকল্প হল - তিস্তা বাঁধ প্রকল্প ও সঙ্কোচ নদী বাঁধ প্রকল্প।

তিস্তা নদী
তিস্তা নদী

❂ জলবায়ু :

জলপাইগুড়ি জেলাটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বর্ষা জলবায়ু অঞ্চলের একটি অংশ। এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই জেলার গড় বার্ষিক আর্দ্রতা ৮২% এবং বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৩১৬০ মিমি।

 কৃষিকাজ :

জলপাইগুড়ি জেলার অনুকূল পরিবেশে কৃষিকাজও অনেক ভালাে হয়। এই জেলায় ধান, গম, তামাক, পাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের শাকসবজি, ফলমূল ও চা পাতাও উৎপাদিত হয়। গম উৎপাদনে এই জেলা রাজ্যে সপ্তম স্থান অধিকার করেছে এবং চা উৎপাদনে রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। আনারস উৎপাদনে জলপাইগুড়ি জেলা রাজ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে।

 অভয়ারণ্য :

জলপাইগুড়ি জেলায় তাের্সা নদীর তীরবর্তী বিশাল জলদাপাড়া অভয়ারণ্যটি অবস্থিত। এই অভয়ারণ্যে একশৃঙ্গী গন্ডার, বাইসন, চিতাবাঘ ও হাতিসহ নানান প্রজাতির প্রানী দেখা যায়। জলপাইগুড়ি জেলায় গরুমারা অভয়ারণ্যটিও অবস্থিত।

 পাহাড় ও পর্বত :

জলপাইগুড়ি জেলায় রয়েছে ১৮০০ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট সিঞ্চলা পর্বত এবং রয়েছে বৈচিত্র্যময় নানান রকমের পাহাড়, যেমন - চেঙ্গামারী, লঙ্কাপারহাট, জয়ন্তী প্রভৃতি।

❂ শিক্ষা :

জলপাইগুড়ি জেলার মােট সাক্ষরতার হার ৭৪ শতাংশ

❂ ভাষা :

এই জেলায় বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষদের প্রধান ভাষা হল বাংলা। তবে এই জেলায় হিন্দি, নেপালী, সাদরি, ওরাওঁ, সাঁওতালি প্রভৃতি ভাষাও প্রচলিত।

❂ ধর্ম :

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী এই জেলায় বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে ৮৩.৪১% হিন্দু ধর্মালম্বী, ১০.২৫% ইসলাম ধর্মালম্বী, ৫.১২% খ্রিস্টান ধর্মালম্বী, ০.৬৪% বৌদ্ধ ধর্মালম্বী এবং বাকি ০.৫৮% অন্যান্য ধর্মালম্বী।

❂ পরিবহন ব্যবস্থা :

জলপাইগুড়ি জেলায় পরিবহন ব্যবস্থা হিসাবে উন্নত সড়কপথ তাে রয়েছেই, সঙ্গে রেলপথও রয়েছে। এই জেলার কয়েকটি বড়াে রেলস্টেশন হল নিউ জলপাইগুড়ি, জলপাইগুড়ি, জলপাইগুড়ি রােড়, নিউ ময়নাগুড়ি, নিউ মাল জংশন।

❂ পর্যটন স্থান :

জলপাইগুড়ি জেলার উল্লেখযােগ্য পর্যটন স্থানগুলি হল -

  • গরুমারা এই জায়গায় হরিণ গন্ডার, লেপার্ড, বাইসন ও হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী দেখা যায়।

গরুমারা
গরুমারা


  • চাপড়ামারী : এই জায়গায় বিভিন্ন বন্যজন্তু দেখা যায়।

চাপড়ামারী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
চাপড়ামারী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য


  • চালসা : চা বাগিচা দ্বারা আবৃত এই জায়গাটির সৌন্দৰ্য্য অপরূপ।
  • জল্পেশ : দর্শনীয় শিবমন্দির।
  • জয়ন্তী মহাকাল : দর্শনীয় চুনাপাথরের প্রাকৃতিক গুহা।
  • হলং : দর্শনীয় বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ কেন্দ্র।

এই হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি বিশিষ্ট জেলা জলপাইগুড়ি জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয়।


ভিডিও ↴

জলপাইগুড়ি জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয় / Introduction of Jalpaiguri District -





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ