পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা | About West Bengal Legislative Assembly in Bengali

ভারতের রাজ্য আইনসভা দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত - উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ। উচ্চকক্ষটি বিধান পরিষদ ও নিম্নকক্ষটি বিধানসভা নামে পরিচিত। তবে সব রাজ্যের রাজ্য আইনসভা দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত নয়৷ ভারতের কেবলমাত্র ৬টি রাজ্যের রাজ্য আইনসভা দুটিকক্ষবিশিষ্ট এবং বাকি রাজ্যগুলির রাজ্য আইনসভা বিধানসভা নামক এককক্ষবিশিষ্ট। আমরা আজকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজ্য আইনসভা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি জেনে নেব -

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা (West Bengal Legislative Assembly) :

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা পশ্চিমবঙ্গের এককক্ষবিশিষ্ট রাজ্য আইনসভা। এই সভার সদস্যদের বিধায়ক বলা হয়। তাঁরা ৫ বছরের জন্য বিধানসভার সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার মােট সদস্যসংখ্যা ২৯৫ জন, এর মধ্যে ২৯৪ জন সদস্য পশ্চিমবঙ্গের এক-আসনবিশিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পশ্চিমবঙ্গের জনগণের ভােটের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে আসেন এবং ১ জন সদস্য অ্যাংলাে-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে সরাসরি নির্বাচিত হন। সাধারণত, বিধানসভার মেয়াদ ৫ বছরের, তবে তার আগেই বিধানসভা ভেঙে দেওয়া যায়। যেমন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হলে বিধানসভা ভেঙে যায়।


 উৎপত্তি ও বৃদ্ধি : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইনসভার উৎপত্তি ও বৃদ্ধি সম্পর্কিত আলােচনা থেকে জানা যায়, ১৮৬১ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইনের বলে, ১৮৬২ সালের ১৮ই জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ব্রিটিশ বঙ্গপ্রদেশে একটি ১২ সদস্যবিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা করেন। এই আইনসভার সদস্য ছিলেন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর এবং কয়েকজন মনােনীত সদস্য। এই কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনটি বসে ১৮৬২ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি। প্রথম দিকে এই আইনসভাটিকে বেঙ্গল কাউন্সিল, লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কাউন্সিল, বেঙ্গল অ্যাসেম্বলি ইত্যাদি নামে ডাকা হত। প্রথম দিকে কাউন্সিলের রাজনৈতিক কার্যকলাপও ছিল সীমাবদ্ধ৷ এই কারণে সঠিকভাবেই এই সভাকে ছােটলাটের দরবার সভা বলে অভিহিত করা হত। তবে ১৮৯২ সালের ভারত শাসন আইনের বলে কাউন্সিলের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। এই সময় কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা বেড়ে হয় ২০ জন। ১৯০৯ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইনের বলে সভার সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করে ৫০ জন করা হয়। ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের বলে এই সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১২৫ করা হয় এবং ১৯১৯ সালের এই আইনের বলেই স্থাপিত হয় বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভা বা বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল। ১৯২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এই সভার উদ্বোধন ঘটে।

এরপর, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের বলে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভাকে দুটি কক্ষে বিভক্ত করা হয় - লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ও লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি৷ ২৫০ জন সদস্যবিশিষ্ট অ্যাসেম্বলির মেয়াদ ছিল সর্বাধিক ৫ বছর। অন্যদিকে কাউন্সিল ছিল একটি স্থায়ী সংস্থা। এই সংস্থায় সদস্যসংখ্যা ৬৩ জনের কম ও ৬৫ জনের বেশি হত না। প্রতি তিন বছর অন্তর এই সভার এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর নিতেন৷

পরবর্তীতে ভারত স্বাধীনতা লাভ করলে, ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট ব্রিটিশ বঙ্গপ্রদেশ পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তান নামে দুটি খন্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। ফলে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভাও বিলুপ্ত হয়ে যায়৷ স্বাধীন ভারতে সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত ৯০টি কেন্দ্রের বিধায়ক ও ২ জন অ্যাংলাে-ইন্ডিয়ান সদস্য নিয়ে গঠিত হয় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। ১৯৪৭ সালের ২১শে নভেম্বর প্রথম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশন বসে। এই সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন প্রফুল্লচন্দ্র ঘােষ এবং অন্যান্য নেতাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন বিধানচন্দ্র রায়, জ্যোতি বসু প্রমুখ।

ভারতীয় সংবিধানে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিকক্ষীয় রাজ্য আইনসভা অনুমােদিত হয়। ১৯৫২ সালের ৫ই জুন ৫১ সদস্যবিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদ গঠিত হয়। ২ জন অ্যাংলাে-ইন্ডিয়ান সদস্য নিয়ে বিধানসভার সদস্যসংখ্যা হয় ২৪০ জন। ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর ১৯৫২ সালের ১৮ই জুন প্রথম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশন বসে।

১৯৬৯ সালের ২১শে মার্চ, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদ অবলুপ্তির প্রস্তাব গৃহিত হয়। এই অনুসারে, ভারতীয় সংসদে পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদ অবলুপ্তি আইন পাস হয়। ১৯৬৯ সালের ১লা আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদ অবলুপ্ত হয়। তখন থেকে আজ অবধি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য আইনসভা এককক্ষবিশিষ্ট, যা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নামে পরিচিত।

পশ্চিমবঙ্গের সপ্তদশ বিধানসভা :

West Bengal Legislative Assembly
West Bengal Legislative Assembly


পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতার বিবাদীবাগ এলাকায় হাইকোর্টের দক্ষিণে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভবনটি অবস্থিত। বর্তমানে ২৯৫ জন সদস্যসংখ্যাবিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গের সপ্তদশ বিধানসভার রাজ্যপাল হলেন মহামান্য জগদীপ ধনখর, মুখ্যমন্ত্রী হলেন শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সংসদীয় বিষয়ক বিভাগের মন্ত্রী হলেন ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিধানসভার Hon'ble Speaker অর্থাৎ অধ্যক্ষ হলেন শ্রী বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, Hon'ble Deputy Speaker অর্থাৎ উপাধ্যক্ষ হলেন ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, Secretary অর্থাৎ সচিব হলেন শ্রী সুপ্রতিম ভট্টাচার্য, শাসক দলের নেত্রী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শাসক দলের উপনেতা হলেন ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিরােধী দলনেতা হলেন শ্রী শুভেন্দু অধিকারী, বিরােধী উপ-দলনেতা হলেন শ্রী মিহির গােস্বামী।

-: রাজ্যপাল :-

মহামান্য জগদীপ ধনখর

মহামান্য জগদীপ ধনখর


-: মুখ্যমন্ত্রী :-

শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপধ্যায়

শ্রীমতী মমতা বন্দ্যো
পাধ্যায়


-: সংসদীয় বিষয়ক বিভাগের মন্ত্রী :-

ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়

ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়


-: অধ্যক্ষ :-

শ্রী বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়

শ্রী বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়


-: উপাধ্যক্ষ :-

ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়


-: সচিব :-

শ্রী সুপ্রতিম ভট্টাচার্য

শ্রী সুপ্রতিম ভট্টাচার্য


-: শাসক দলের নেত্রী :-

শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়


-: শাসক দলের উপনেতা :-

ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়

ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়


-: বিরােধী দলনেতা :-

শ্রী শুভেন্দু অধিকারী

শ্রী শুভেন্দু অধিকারী


-: বিরােধী উপ-দলনেতা :-

শ্রী মিহির গােস্বামী

শ্রী মিহির গােস্বামী



এই হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এককক্ষবিশিষ্ট রাজ্য আইনসভা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা সম্পর্কিত আলােচনা।


Video 

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা | About West Bengal Legislative Assembly | West Bengal Vidhan Sabha in Bengali -







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ