আমরা আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু বিষয় সম্পর্কে জেনেই চলেছি, এই সব কিছুর পাশাপাশি চলুন জেনে আসি নিজ নিজ জেলা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি বিশিষ্ট জেলা কোচবিহার জেলা সম্পর্কে -
| কোচবিহার জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয় |
কোচবিহার জেলা (Cooch Behar District) :
পশ্চিমবঙ্গের জেলা গুলির মধ্যে একটি অন্যতম উল্লেখযােগ্য জেলা হল কোচবিহার জেলা। এই জেলা যেমন প্রাকৃতিক নানা সৌন্দর্য্যে আবর্তিত তেমনি মানুষদের তৈরি ঐতিহাসিক নানা স্মৃতিও বর্তমান। সমগ্র কোচবিহার জেলাটি উত্তরবঙ্গ সমভূমির অন্তর্গত। এখানকার ভূভাগ উঁচু-নীচু। কোনাে কোনাে অঞ্চল এতটাই নীচু যে বর্ষাকালে নদীর দুকুল ছাপিয়ে বন্যা দেখা দেয়। কোচবিহার জেলার উচ্চভূমি অঞ্চলটি শীতলকুচি ব্লকের লালবাজারে ও নিম্নভূমি অঞ্চলগুলি দিনহাটা মহাকুমায় অবস্থিত। এই জেলায় কোনাে পাহাড় বা পর্বত নেই, তবে বিভিন্ন এলাকায় একধিক বিশালাকার ঝিল দেখতে পাওয়া যায়।
| কোচবিহার জেলার ম্যাপ |
❂ স্থাপিত :
❂ আয়তন :
❂ জনসংখ্যা :
❂ সীমানা :
❂ ইতিহাস :
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোচবিহার একটি রাজ্য থেকে একটি রাজ্যে, তারপর বর্তমানে একটি জেলায় রূপান্তরিত হয়েছে। ইতিহাস অনুযায়ী বর্তমান কোচবিহার জেলা অতীতে বৃহত্তর কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। ১৭৭২ সালে ভুটানের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে কোচবিহার রাজ ধৈর্যেন্দ্র নারায়ণ ও ওয়ারেন হেস্টিংসের মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে কোচবিহার ব্রিটিশদের একটি করদ রাজ্যে পরিণত হয়। ১৭৭৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে রাজ্যটি কোচবিহার নামে পরিচিত হয় এবং এর রাজধানীর নাম হয় বিহার ফোর্ট। উল্লেখ্য কোচবিহার শব্দটির অর্থ কোচ জাতির বাসস্থান। কোচবিহার গেজেট অনুযায়ী, মহারাজার আদেশ অনুযায়ী রাজ্যের সর্বশেষ নামকরণ হয় কোচবিহার। এরপর ১৯৪৯ সালের ২৮ আগস্ট রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ কোচবিহার রাজ্যকে ভারতীয় অধিরাজ্যের হাতে তুলে দেন এবং সেই বছরেই ১২ই সেপ্টেম্বর থেকে কোচবিহার ভারতের কমিশনার শাসিত প্রদেশে পরিণত হয়। এরপর ১৯৫০ সালের ১৯ জানুয়ারি কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি জেলায় পরিণত হয়।
❂ প্রশাসনিক বিভাগ :
- কোচবিহার।
- কোচবিহার সদর,
- দিনহাটা,
- মাথাভাঙ্গা,
- মেখলিগঞ্জ ও
- তুফানগঞ্জ।
- কোচবিহার পৌরসভা,
- দিনহাটা পৌরসভা,
- মাথাভাঙ্গা পৌরসভা,
- তুফানগঞ্জ পৌরসভা,
- মেখলিগঞ্জ পৌরসভা ও
- হলদিবাড়ি পৌরসভা।
- কোচবিহার-১,
- কোচবিহার-২,
- দিনহাটা-১,
- দিনহাটা-২,
- সিতাই,
- মাথাভাঙ্গা-১,
- মাথাভাঙ্গা-২,
- শীতলকুচি,
- মেখলিগঞ্জ,
- হলদিবাড়ি,
- তুফানগঞ্জ-১ ও
- তুফানগঞ্জ-২।
- কোচবিহার জেলায় ১২টি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে।
- কোচবিহার জেলায় ১২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে।
- কোচবিহার জেলায় ১৭১৪টি গ্রাম সংসদ রয়েছে।
- এই জেলায় ১১৩২টি বসবাসকারী গ্রাম রয়েছে।
- এই জেলায় ১২০২টি মৌজা রয়েছে।
- কোচবিহার জেলার জেলাপরিষদের সংখ্যা - ১টি।
- মেখলিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র,
- মাথাভাঙ্গা বিধানসভা কেন্দ্র,
- কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র,
- কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র,
- শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্র,
- সিতাই বিধানসভা কেন্দ্র,
- দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্র,
- নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্র ও
- তুফানগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র।
- কোচবিহার লােকসভা কেন্দ্র।
- কোচবিহার কোতােয়ালি থানা,
- পুন্ডিবাড়ি থানা,
- দিনহাটা থানা,
- দিনহাটা মহিলা থানা,
- সাহেবগঞ্জ থানা,
- সিতাই থানা,
- মাথাভাঙ্গা থানা,
- ঘোকসাডাঙা থানা,
- শীতলকুচি থানা,
- হলদিবাড়ি থানা,
- মেখলিগঞ্জ থানা,
- কুচলিবাড়ি থানা,
- তুফানগঞ্জ থানা ও
- বক্সিরহাট থানা।
❂ ভূ-প্রকৃতি :
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরে অবস্থিত এই কোচবিহার জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দৰ্য্যও অপরূপ। সমগ্র কোচবিহার জেলাটি উত্তরবঙ্গ সমভূমির অন্তর্গত। এখানকার ভূভাগ উঁচু-নীচু। কোনাে কোনাে অঞ্চল এতটাই নীচু যে বর্ষাকালে নদীর দুকুল ছাপিয়ে বন্যা দেখা দেয়। কোচবিহার জেলার উচ্চভূমি অঞ্চলটি শীতলকুচি ব্লকের লালবাজারে ও নিম্নভূমি অঞ্চলগুলি দিনহাটা মহাকুমায় অবস্থিত। এই জেলায় কোনাে পাহাড় বা পর্বত নেই, তবে বিভিন্ন এলাকায় একধিক বিশালাকার ঝিল দেখতে পাওয়া যায়।
❂ নদ-নদী :
এই জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলির মধ্যে প্রধান নদীগুলি হল তিস্তা, তাের্সা, জলঢাকা, রায়ডাক, কালজানি, ধরলা, মানসাই, গদাধর ইত্যাদি।
❂ জলবায়ু :
অত্যন্ত আর্দ্র পরিবেশ এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত কোচবিহার জেলার জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই জেলার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৩৩৫৪ মিমি।
❂ কৃষিকাজ :
কোচবিহার জেলার অনুকূল পরিবেশে কৃষিকাজও অনেক ভালাে হয়। এই জেলায় ধান, গম, তামাক, পাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের শাকসবজি, ফলমূল ও চা পাতাও উৎপাদিত হয়। গম উৎপাদনে এই জেলা রাজ্যে ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে।
❂ শিক্ষা :
শিক্ষার দিক দিয়েও এই কোচবিহার জেলা অনেক এগিয়ে। প্রত্যেক বছর মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বাের্ডে প্রথম থেকে দশম স্থানের মধ্যে কোনাে না কোনাে স্থান পেয়েই থাকে এই কোচবিহার জেলার ছাত্রছাত্রীরা। এই জেলার মােট সাক্ষরতার হার ৭৫.৪৯ শতাংশ।
❂ ভাষা :
কোচবিহার জেলায় বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষদের প্রধান ভাষা হল বাংলা এবং উপভাষা হিসেবে রাজবংশী উপভাষাই এই জেলার জনপ্রিয় উপভাষা।
❂ সংস্কৃতি :
সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে কোচবিহারের জনপ্রিয় লােকসঙ্গীত হল ভাওয়াইয়া। এছাড়াও, কোচবিহারের জনপ্রিয় পালাগান হল বিষহরা।
❂ উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান :
কোচবিহার জেলার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল -
- কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়
- উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
- এম.জে.এন. মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
- আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল মহাবিদ্যালয়
- কোচবিহার মহাবিদ্যালয়
- দিনহাটা মহাবিদ্যালয়
- তুফানগঞ্জ মহাবিদ্যালয়
- মেখলীগঞ্জ মহাবিদ্যালয়
- মাথাভাঙ্গা মহাবিদ্যালয় ইত্যাদি।
❂ পরিবহন ব্যবস্থা :
কোচবিহার জেলায় পরিবহন ব্যবস্থা হিসাবে উন্নত সড়কপথ তাে রয়েছেই, সঙ্গে রেলপথ ও আকাশপথেরও ব্যবস্থা রয়েছে। নিউ কোচবিহার এই জেলার প্রধান রেলষ্টেশন এবং কোচবিহার বিমানবন্দর হল একমাত্র বিমানবন্দর।
❂ ঐতিহাসিক স্থাপত্য :
ঐতিহাসিক দিক দিয়েও এই জেলা অধিক পরিপূর্ণ। এই জেলার সদর কোচবিহার শহর আসলে রাজারই শহর। একসময় এই অঞ্চলে রাজার রাজত্ব ছিল এবং সেই রাজত্বের রাজপ্রাসাদ আরও অন্যান্য কীর্তিকর্ম এই শহরে এখনও বর্তমান।
❂ পর্যটন স্থান :
কোচবিহার জেলার উল্লেখযােগ্য পর্যটন স্থানগুলি হল -
- কোচবিহার রাজপ্রাসাদ,
- মদনমােহন মন্দির,
- সাঘরদিঘি,
- বড়ো দেবী মন্দির,
- মধুপুর ধাম,
- নৃপেন্দ্রনারায়ণ পার্ক,
- বাণেশ্বর শিবমন্দির,
- অনাথনাথ শিবমন্দির,
- রসিকবিল,
- গােসানীমারি রাজপাঠ,
- গােসানীমারি মন্দির ইত্যাদি।
এই হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি বিশিষ্ট জেলা কোচবিহার জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
0 মন্তব্যসমূহ